সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে।
জানি না তোমার ধন, রতন আছে কি না রানীর মতন
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় বসে।
কোন বনেতে জানিনে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল
কোন বনেতে উঠেরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো দেখে আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।
সারমর্ম : জন্মভূমি স্বর্গতুল্য। জন্মভূমি ছাড়া কোনো দেশই মানুষকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না। তাই জন্মভূমির মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা সবারই একান্ত কাম্য।
২.
ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল,
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।
মুহূর্ত নিমেষ কাল, তুচ্ছ পরিমাণ,
গড়ে যুগ-যুগান্তর অনন্ত মহান।
প্রত্যেক সামান্য ত্রুটি ুদ্র অপরাধ
ক্রমে টানে পাপ পথে, ঘটায় প্রমাদ।
প্রতি করুণার দান, স্নেহপূর্ণ বাণী
এ ধরায় স্বর্গসুখ নিত্য দেয় আনি।
সারমর্ম : ুদ্র হতেই বৃহতের সৃষ্টি। ছোট ছোট বালুকণার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মহাদেশ, বিন্দু বিন্দু জল সৃষ্টি করে সিন্ধু, তুচ্ছ মুহূর্তের সমষ্টিতে গড়ে ওঠে যুগ-যুগান্তর। ঠিক তেমনি সামান্য ত্রুটিও ক্রমে টেনে নেয় পাপ পথে এবং তা মানুষের পতন আনে। আবার ছোট ছোট করুণার দান ও স্নেহপূর্ণ বাণী পৃথিবীকে স্বর্গে পরিণত করে।
৩.
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।
এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়
পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি যেসব কৌতূহলে সন্দেহ নেই মাত্র।
সারমর্ম : বিশ্ব প্রকৃতি এক বিশাল পাঠশালার মতো। সেখানে বিচিত্র কর্মপ্রবাহের মধ্যে মানুষ অনেক কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়েছে। মানুষের উচিত সেসব অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে জীবন সমৃদ্ধ করা।
৪.
বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের ওপরে
একটি শিশির বিন্দু।
সারমর্ম : বহু অর্থ, সময় আর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় মানুষ পাড়ি জমায় সৌন্দর্য দর্শনে। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতা থেকে যায় তার দৃষ্টির অন্তরালে।মূলত মানুষের সামনে এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিচিত্র সৌন্দর্যের শোভা বিরাজমান আর তা উপলব্ধির জন্য চাই সে ধরনের দৃষ্টিশক্তি।
৫.
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাবো তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
সারমর্ম : পৃথিবীতে নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। এবার পুরনোকে মৃত ও ধ্বংসস্তূপে স্থান নিতে হবে। তবে যত দিন প্রবীণেরা জীবিত আছেন, তত দিন এ পৃথিবীর জঞ্জাল পরিষ্কার করে শিশুদের বাসোপযোগী করে তোলার দৃপ্ত অঙ্গীকার করতে হবে।
৬.
কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তাহা বহু দূর?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনি মোদের বিবেক পায়গো লয়।
আত্মগ্লানির নরক অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়েঘরে।
সারমর্ম : মানুষ আপন কর্মফলের দ্বারা এ পৃথিবীতেই স্বর্গ-নরক রচনা করতে পারে। মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সৎ ও পুণ্য কর্মের দ্বারা জগতে অমিয় ধারা নামিয়ে আনতে পারে। আবার পাপকর্ম সাধনের দ্বারা মানুষ অনুতাপের দহনে বিদগ্ধ হয়ে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে। এভাবে দেখা যায়, স্বর্গ-নরক মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান। -
সারাংশ বা সারমর্ম
১। ছোট ছোট বালুকণা.....স্বর্গসুখ নিত্য দেয় আনি।
সারমর্ম : কোনো ক্ষুদ্র বস্তুই তুচ্ছ নয়। সহস্র ক্ষুদ্রের সমন্বয়েই বৃহতের সৃষ্টি। ত্রুটি কিংবা অপরাধ ক্ষুদ্র হলেও ক্রমে তা পাপের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং এর পরিণাম হয় ভয়ংকর। অন্যদিকে করুণা ও স্নেহের ক্ষুদ্র বাণী এ মাটির পৃথিবীতে স্বর্গের সুখ এনে দিতে পারে।
২। শৈশবে সদুপদেশ যাহার না.....না আসিলে ফিরে।
সারমর্ম : জীবনে সার্থকতা অর্জনের জন্য ছেলেবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সময়ের কাজ সময়ে না করতে পারলে তার জন্য জীবনে মূল্য দিতে হয়। কারণ সুযোগ একবার চলে গেলে তা আর ফিরে না-ও আসতে পারে। তখন অনুশোচনা করেও আর লাভ হবে না।
৩। মাতৃস্নেহের তুলনা নাই। কিন্তু অতি স্নেহ......
সারাংশ : মাতৃস্নেহ অতুলনীয় হলেও তার মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয়ে সন্তান পরনির্ভরশীল ও আত্মশক্তিহীন হয়ে পড়ে। ফলে তা মনুষ্যত্ব বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্ধ মাতৃস্নেহ শেষ পর্যন্ত সন্তানের অমঙ্গলের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৪। কোনো সভ্য জাতিকে অসভ্য করার ইচ্ছা যদি তোমার থাকে, তা হলে তাদের সব বই ধ্বংস করো এবং সব সমাজবিজ্ঞান......
সারাংশ : লেখক ও পণ্ডিত ব্যক্তিরাই দেশ ও জাতির পথপ্রদর্শক। কোনো সভ্য জাতির সাহিত্য ধ্বংসের মাধ্যমে জাতিকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব। জাতির পথ নির্দেশনা এই সাহিত্যে বিদ্যমান। তাই জাতির অগ্রগতিকে আরো গতিশীল করার জন্য সাহিত্যের মাধ্যমে জাতির মনে অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
৫। শ্রমকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করো। কালি-ধূলির মাঝে, রৌদ্রবৃষ্টিতে কাজের ডাকে নামিয়া যাও। বাবু হইয়া......
সারাংশ : কায়িক শ্রম মানুষের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। শ্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া যায় না। চিন্তা ও পুস্তক জ্ঞানের যে দ্বার উন্মোচন করে, তা পূর্ণতা পায় কায়িক শ্রমে। এ জন্য শ্রমকে শ্রদ্ধা করা উচিত।
৬। দণ্ডিতের সঙ্গে দণ্ডদাতা......তুমি তার কাছে।
সারমর্ম : অপরাধপ্রবণতা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি নয়। কাজেই কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার আগে বিচারককে আন্তরিক ও সহমর্মী হওয়া উচিত। যে বিচারক দণ্ড দিতে গিয়ে অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং নিজেকে দণ্ডিত ব্যক্তির অতি কাছের মানুষ ভেবে ব্যথিত হন, তাঁর বিচারই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচার।
৭। পরের মুখে শেখা বুলি......কোথাও পাবি না রে।
সারমর্ম : নিজস্বতাই মানুষের যথার্থ পরিচয় ও আত্মপ্রতিষ্ঠার ভিত্তিভূমি। পর ভাষা ও ভূষণ অনুসরণ করে মানুষ 'নকল' মানুষ হয়ে উঠতে পারে। এতে মানুষের কোনো মর্যাদা নেই, বরং নিজেরই অমর্যাদা ঘটে। আপন মূল্যবোধ ও সত্তাকে ধারণ করেই মানুষ সত্যিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা লাভ করতে পারে। অনুকরণ সর্বদাই নিন্দনীয়।
৮। তুমি জীবনকে সার্থক সুন্দর করিতে চাও? ভালো কথা। কিন্তু......সুন্দর হইয়া উঠিবে।
সারাংশ : জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার প্রধান উপায় হলো কঠোর পরিশ্রম। সব বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করার দৃপ্ত চেতনাই পারে জীবনকে সার্থক করতে। নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দানবটির বিনাশ সাধনই জীবনের সার্থক ও সুন্দর সূর্যোদয় ঘটাতে পারে।
৯। নিন্দা না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের গৌরব কি থাকিত? ......দেওয়াও একটা মস্ত কাজ।
সারাংশ : মানবজীবনকে সুন্দর, সফল ও গৌরবময় করার জন্য নিন্দা বা সমালোচনার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভালো কাজ, উত্তম গ্রন্থ, মহৎ ধর্মচর্চা- সব কিছুই নিন্দার কষ্টিপাথরে যাচাই করে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে। নিন্দা সহ্য করার মধ্যে গৌরব নিহিত। কারণ নিন্দা যেমন দোষীকে সংশোধনের সুযোগ দেয়, তেমনই মহত্ত্বের গৌরবও প্রকাশ করে।
১০। আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই......এসো বন্ধু, এ জীবন সুমধুর করি।
সারমর্ম : অন্যকে সুখ দিতে পারলেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া যায়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে অন্যের সুখ-দুঃখকে নিজের করে নিতে পারলেই এ সংসারে প্রকৃত সুখের স্বাদ পাওয়া যায়। প্রকৃত সুখ স্বীয় জীবন ভোগে নয়, সবাইকে নিয়ে হৃদয়-বিনিময়ে।
0 comments:
Post a Comment